বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ এবং করণীয়
নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণে শরীর ও স্বাস্থ্য উভয়ই ভাল থাকে। অপরদিকে খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম ঘটলে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান বিশেষত ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে কি না তা কয়েকটি সাধারণত লক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারা যায়। আজকে আমরা সবচেয়ে প্রচলিত কিছু ভিটামিনের ঘাটতি জনিত লক্ষণ এবং এর করণীয় সম্পর্কে জানব।
১. ভঙ্গুর চুল ও নখঃ এই লক্ষণটি সাধারণত অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা দিয়ে থাকে। চুল ও নখের ভঙ্গুরতার কারণে বিভিন্ন বিষয় জড়িত থাকতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিনের ঘাটতি। বায়োটিন খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তিত করতে সহায়তা করে থাকে। শরীরে বায়োটিনের ঘাটতি খুব কম পরিমাণেই দেখা দিয়ে থাকে তবে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে চুল ও নখ ভঙ্গুর হয়ে থাকে। বায়োটিনের ঘাটতির অন্যান্য লক্ষণগুলো হল অবসাদ, মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি। এই সমস্যার সমাধান পেতে বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস, বাদাম, পালং শাক, ব্রকলি, ফুলকপি, মিষ্টি আলু, সমস্ত শস্যজাতীয় খাবার ইত্যাদি গ্রহণের জোর দিতে হবে।
২.দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়াঃ অনেক কারণেই দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। ব্রাশের কারণে জোরে আঘাত লাগলেও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। তবে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হলেও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝরতে পারে। আমাদের শরীরে কোন বিপাকের মাধ্যমে ভিটামিন সি উৎপন্ন হয় না তাই ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এটির ঘাটতি পূরণ করতে হয় । বিভিন্ন ধরনের টকজাতীয় ফল ও সবজি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায় যা দাঁত ও দাঁতের মাড়ির যত্ন নিতে সাহায্য করে।
৩. স্বল্প দৃষ্টি এবং চোখের সাদা অংশের বৃদ্ধিঃ স্বল্প দৃষ্টিশক্তি বিশেষত রাতের স্বল্প দৃষ্টির জন্য সাধারণত ভিটামিন এ এর ঘাটতিকে দায়ী করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের হলুদ ফল ও সবজি, কলিজা, মাছ, মাংস ইত্যাদি থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায় যা অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাজ করতে পারে।
৪. খুশকিঃ চুলের খুশকির জন্য অনেক কারণকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে জিংক, ভিটামিন বি৩, বি২ এবং বি৬ এর ঘাটতির প্রভাব লক্ষণীয়। সমস্ত শস্যজাতীয় খাবার, পোল্ট্রি, গরুর মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, কলিজা, বাদাম ইত্যাদি খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন বি২,বি৩ এবং বি৬ পাবেন যা চুলের খুশকি কমাতে সহায়তা করবে।
৫. চুলপড়াঃ সচরাচর দৃশ্যমান সমস্যার মধ্যে এটি অন্যতম । সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি, পানি ও পরিবেশগত কারণে চুলপড়ার প্রবনতা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষত লৌহ, জিংক, অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি ৭ বা বায়োটিন, আমিষ ইত্যাদির ঘাটতির কারণে চুল পড়তে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খেতে হবে।
-পুষ্টিবিদ মোঃ আকতারুল ইসলাম
No comments