ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধে অত্যাবশকীয় খাদ্যাভ্যাস


যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এসেছে  অনেক ধরনের পরিবর্তন। আমরা প্রতিনিয়ত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত বেশি সুস্বাদু খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। যার ফলস্রুতিতে আমাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে যাচ্ছে এবং এই ওজনাধিক্য পরবরর্তীতে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রোগ সৃষ্টিকে প্রভাবিত করছে। ফ্যাটি লিভার এই সব অধিক ওজনজনিত রোগের মধ্যে অন্যতম। ফ্যাটি লিভার বলতে মূলত লিভার বা কলিজায় বেশি পরিমাণে চর্বি বা ফ্যাট জমা হওয়াকে বোঝায়। বিশেষত স্থূল ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তবে নিম্নোক্ত খাদ্যাভ্যাসগুলো মেন চললে এই রোগ থেকে অনেকাংশে বেঁচে থাকা সম্ভব।

১. অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ পরিহার করাঃ
 প্রত্যেক ব্যক্তির তার নিজ নিজ ওজন, উচ্চতা, পরিশ্রমের ধরন ইত্যাদির ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা পরিমাণ খাদ্য বা ক্যালরি প্রয়োজন হয়। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য বা ক্যালরি সেই ব্যক্তির তো কোন উপকাওে আসেই না পক্ষান্তরে এই কারণে তার ওজন বেড়ে যায় অত্যাধিক হারে। আপনার উচ্চতার তুলনায় ওজন ঠিক আছে কি না তা বিএমআই ক্যালকুলেটর এর সাহায্যে সহজেই জেনে নিতে পারেন। তাই এই জটিল রোগটি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ পরিহার করুন।


২. অতিরিক্ত শর্করা এবং চিনিজাতীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়াঃ 
যদিও ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাদ্যের আধিক্য ফ্যাটি লিভারের কারণ হিসেবে ধরা হয় তব্ওু চর্বির চেয়ে বেশি দায়ী হল চিনি বা অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার। দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত শর্করা গ্লাইকোজেন হিসেবে যকৃত বা লিভারেই এসে জমা হয় এবং পরবর্তীতে ফ্যাটি লিভারের সৃষ্টি হয়। এজন্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত বা অতিরিক্ত  শর্করাজাতীয় খাবার, বেশি চিনি, কোমল পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি পরিমিত পরিমানে খেতে হবে বা প্রয়োজনে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

৩. লিভারের জন্য উপকারী কিছু খাদ্যঃ 
বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে যা লিভার বা কলিজার চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে ওটমিল ও জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য, ওমেগা-৩ তেলযুক্ত মাছ যেমন  ইলিশ, রূপচাঁদা , স্যামন, টুনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নানা ধরনের বাদাম বিশেষ করে আখরোট ফ্যাটি লিভারের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। গবেষণায় পাওয়া গেছে পরিমিত পরিমানে কফি ও সবুজ চা লিভারে চর্বি কমাতে সহায়তা কওে থাকে। এছাড়াও ইদানীংকালে ভিটামিন ডি-এর অভাবের সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাই ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যেমন ডিম, মাছ, মাংস, মাছের তেল ইত্যাদি খেতে হবে এবং শরীরে সকালের সূর্যের মিষ্টি আলো লাগাতে হবে।

৪. খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যতাঃ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন নিয়ে আসা। প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে এবং খাবার রান্নায় বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসতে হবে সাথে প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে এমন যেমন শাকসবজি  ফুলকপি, ব্রকলি, গাজর, শশা ও তাজা ফলমূল যেমন পেয়ারা, পেঁপে, আম, কলা ইত্যাদি খেতে হবে। এছাড়াও  সবুজ শাক ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।


-পুষ্টিবিদ মোঃ আকতারুল ইসলাম 
ট্রেনিং অফিসার (নিউট্রিশন)
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এনডিপি।

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.