ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়



আজকাল সবাই যখন ওজন কমানোর পিছনে ছুটছেন ঠিক একই সময়ে কিছু মানুষ আছেন যারা কিভাবে ওজন বাড়ানো যায় তার উপায় খুঁজছেন। আজকে আমরা ওজন বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানব।

১. খাদ্য গ্রহণঃ আপনার ওজন বাড়বে নাকি কমবে নাকি অপরিবর্তিত থাকবে সেটা নির্ভর করছে আপনার দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের উপর। আপনি যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণ করছেন  করছেন সে পরিমাণ ক্যালরি যদি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যম খরচ করে  ফেলেন তাহলে আপনার ওজন অপরিবর্তিত। তবে আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করছেন তার থেকে যদি কম পরিমান ক্যালোরি খরচ করেন তবে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রথমেই আপনাকে জেনে নিতে হবে বর্তমানে  আপনার দৈনিক কত ক্যালরি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আপনার বর্তমান ক্যালরির চাহিদা থেকে দৈনিক ৫০০ বা ৬০০ ক্যালরির বেশি গ্রহণ করতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে দুধ ডিম দই পনির  মাছ, মাংস বাদাম, ভাত আলু ইত্যাদি আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। দৈনিক ৩  থেকে ৬ বার পর্যন্ত গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সময় মত খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে যখন ক্ষুধা লাগবে তখন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

২. বড় প্লেটে খাবার খাওয়াঃ খাবার খাওয়ার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন বড় প্লেটে খাবার খাওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় প্লেটে খাবার খাওয়া একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বড় প্লেটে খাবার বেশি নিলেও আপাত বৃষ্টিতে খাবারের পরিমাণ কম মনে হয়। এবং এটি মস্তিষ্কের বার্তা প্রেরণ করে যে ক্ষুধা নিবারণের জন্য আরও বেশি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এভাবে এটি অধিক খাদ্য গ্রহণ কে প্রভাবিত করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৩. পরিমিত পরিমাণ পানি পান করাঃওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস করার পিছনে পানির সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও এটি খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে থাকে। তাই খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য পরিমিত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন।পানি পান করার ক্ষেত্রে একটা বিষয় সবসময় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল খাবার খাওয়ার পরপরই যেন বেশি পরিমাণ পানি পান না করা হয়। খাবার খাওয়ার পরপরই বেশি পরিমাণ পানি পান করলে তা স্বাভাবিক খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। তবে খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা পূর্বে পানি পান করলে এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে কাজ করে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৮ গ্লাস থেকে ১২ গ্লাস বা ২ লিটার থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তবে পানি পান করার হার ব্যক্তিভেদে ও বয়সভেদে ভিন্ন হতে পারে।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামঃ শরীর সুস্থ রাখার জন্য এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৭ ঘণ্টা থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমানোর ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো হয় এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা হয়। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া হয় এবং খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা খুবই ভালো একটি  অভ্যাস। এটি শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী।

৫. হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করাঃ অনেকের ধারণা শুধুমাত্র ওজন কমাতে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা জরুরী। কিন্তু এই ধারণাটি আসলে সঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণ ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যাবশ্যক। কারণ শুধুমাত্র ফ্যাট বা চর্বি বৃদ্ধি করে ওজন বৃদ্ধি করা অস্বাস্থ্যকর এবং পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিটি  বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। তাই শুধুমাত্র ফ্যাট বা চর্বি বৃদ্ধি করে নয় বরং মাংসপেশির গঠন সুন্দর ও মজবুত  করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ওজন স্বাস্থ্যকর  বৃদ্ধি করতে পারি। এ কারণে সাধারণ হাঁটাচলা বা ব্যায়াম যেমন সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা ইত্যাদি অল্প সময় ধরে আমরা বজায় রাখতে পারি। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন এই পরিশ্রম এর মাত্রা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে থাকে।

৬. ধূমপান করা থেকে বিরত থাকাঃ গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধূমপান করেন তাদের ক্ষুধামন্দার হার অনেক বেশি থাকে।এর ফলে তাদের দৈনিক যে খাদ্য ক্যালরি চাহিদা থাকে সেটি পূরণ করা সম্ভব হয় না। যেহেতু ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অস্বাস্থ্যকর তাই ধূমপান পরিহার করাই উত্তম।

প্রত্যেক ব্যক্তিরই খাদ্য চাহিদা, খাদ্যের ধরণ, রুচি অন্যদের থেকে আলাদা। আবার ব্যাক্তিভেদে খাদ্য হজমের হার একজন থেকে আলাদা। তবে সাধারণভাবে কোন ব্যক্তির হজম শক্তি যদি স্বাভাবিক থাকে তবে এই কয়েকটি বিষয় মেনে চললে আশা করা যায় সহজেই আপনাদের ওজন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন। সকলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

-পুষ্টিবিদ মোঃ আকতারুল ইসলাম

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.