বিভিন্ন ভিটামিন, তাদের কাজ এবং উৎস

vitamins-functions-sources
বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন কাজ করে থাকে। কিছু কিছু ভিটামিন পানিতে দ্রবণীয় আবার কিছু কিছু ভিটামিন চর্বি বা ফ্যাটে দ্রবণীয়। প্রত্যেকটি ভিটামিনই আমাদের জন্য খুবই অত্যাবশ্যক।



ভিটামিন  এঃ

ভিটামিন এ চর্বিতে দ্রবণীয় অত্যাবশ্যক একটি ভিটামিন। এটি আমাদের শরীরের জন্য বিশেষত চোখের জন্য খুবই উপকারী। স্বাস্থ্যকর শরীর গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন 'এ' এর অবদান অনেক। আজকে আমরা ভিটামিন "এ" এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানব।

কাজঃ
  •  চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে
  •  ত্বকের কোষকে ভালো রাখে ফলে ত্বক মসৃণ থাকে
  •  শরীর গঠন এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
  •  হাঁড় ও দাঁত তৈরীতে সহায়তা করে
  •   সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  •    প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করে
উৎসঃ

প্রাণিজ উৎসঃ
ফিস লিভার ওয়েল, মাছের তেল, কলিজা, মাখন, ডিমের কুসুম, কিডনি, চর্বি

উদ্ভিজ্য উৎসঃ
রঙিন শাকসবজি, ফল এবং ভুট্টা ও মিষ্টি আলু

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ

প্রায় ৫০০০ আই ইউ* ( প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
প্রায় ৬০০০ আই ইউ ( গর্ভবতীর জন্য )
প্রায় ৮০০০ আই ইউ ( প্রসূতির জন্য )
প্রায় ২০০০-৪৫০০ আই ইউ ( ১-১২ বছর বয়স পর্যন্ত )
* আই ইউ  (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)

ভিটামিন বি১ঃ

ভিটামিন বি১  এর আরেক নাম থায়ামিন। এটিও পানিতে দ্রবণীয় বলে অধিক তাপে গুণগত মানে হ্রাস পায়।

উৎসঃ

ভাল উৎসঃ শস্য, ডাল, বাদাম

উচ্চ উৎসঃ চালের আবরণ, গম, শুষ্ক ইস্ট
সাধারণ উৎসঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি এবং ফল

ভিটামিন-বি২

কাজঃ 
  • শরীরে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন করে
  • চর্বি ও আমিষ থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে
  • দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধনে সাহায্য করে
উৎসঃ 
প্রাণিজ উৎস যেমন-চর্বি বিহীন মাংস, কলিজা, ডিম, দুধ, মাছ
উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-ঢেঁকি ছাঁটা সিদ্ধ চাল, গম, যব, ইস্ট, মটরশুঁটি ইত্যাদি

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ

১.৪ মিলিগ্রাম ( পুরুষের জন্য )
১.০ মিলিগ্রাম ( মহিলার জন্য )
১.১ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
১.৪ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )

ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন

কাজঃ 
  • শর্করা বিপাকে সাহায্য করে
  • শর্করা ও আমিষ থেকে দেহের চর্বি উৎপাদনে সাহায্য করে
উৎসঃ 

প্রাণিজ উৎসঃ মাংস, কলিজা
উদ্ভিজ্জ উৎসঃ গম, ডাল, বাদাম, তেল বীজ, ছোলা ও শাক-সবজি

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ

১৮.২ মিলিগ্রাম ( পুরুষের জন্য )
১৩.২ মিলিগ্রাম ( মহিলার জন্য )
১৫.১ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
১৮.১ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )

ভিটামিন  বি১২ঃ

আটটি বি ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন বি১২ অন্যতম। এটি কোবালামিন নামেও পরিচিত। ভিটামিন বি১২ পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মায়েলিন সংশ্লেষে কাজ করে। লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে কাজ করে। মানুষের শরীরের প্রতিটি সেল এর বিপাকে এই ভিটামিনটি জড়িত, বিশেষ করে ডিএনএ সংশ্লেষণ, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামিনো অ্যাসিড মেটাবলিজমকে এটি প্রভাবিত করে। 

কাজঃ 
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
  • লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে কাজ করে
  • মায়েলিন সংশ্লেষে কাজ করে
  • কো-এনজাইম হিসেবে দেহে কাজ করে
  • ডিএনএ সংশ্লেষে কাজ করে
  • বিভিন্ন মেটাবলিজম বা বিপাককে প্রভাবিত করে
উৎসঃ
কলিজা, মগজ, হৃৎপিন্ড, কিডনি, মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিমের কুসুম ও গরুর কলিজা।

 বিঃদ্রঃ উদ্ভিজ্জ খাদ্যে ভিটামিন-বি১২ নেই।

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ 
১.০ মাইক্রোগ্রাম (শিশুর জন্য)
২.০ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য)
৩.০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)
২.৫ মাইক্রোগ্রাম (প্রসূতির জন্য)


ভিটামিন সিঃ

ভিটামিন সি আমাদের জন্য যে কোন বয়সে খুবই প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন। পানিতে দ্রবণীয় এই ভিটামিনটি আমাদের শরীরে জমা থাকে না বলে দৈনিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি গ্রহণ করতে হয়। অন্যান্য উপাদানের কার্যকারিতা বৃ্দ্ধিতে ভিটামিন সি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষত বিভিন্ন ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

কাজঃ 

  • কোলাজেন নামক আমিষ তৈরী এবং রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে
  • চর্বি ও আমিষ বিপাকে সাহায্য করে
  • রক্ত তৈরী করার জন্য লৌহ এবং তাম্রকে ব্যবহৃত করতে সাহায্য করে
  • চামড়া মসৃণ এবং উজ্জল রাখে
  • দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে
  • ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে
উৎসঃ 

টক জাতীয় ফল যেমন - আমলকি, পেঁয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু, কামরাঙ্গা, কুল, আনারস। এছাড়া কাঁচামরিচ, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, সজনে পাতা, মূলাশাক ইত্যাদি কাঁচা খেলেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ

২০ মিলিগ্রাম ( শিশুর জন্য )
৩০ মিলিগ্রাম ( প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য )
৫০ মিলিগ্রাম ( গর্ভবতীর জন্য )
৫০ মিলিগ্রাম ( প্রসূতির জন্য )

ভিটামিন ডিঃ

হাড় ও দাঁতের যত্ন নিতে যে ভিটামিনটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সেটি হল ভিটামিন ডি। চর্বিতে দ্রবণীয় এই ভিটামিনটির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। কারণ আমাদের দেহকে সুস্থ সবল রাখতে কঙ্কালতন্ত্র তথা হাড় মজবুত রাখা জরুরি। এই ভিটামিনটি এক্ষেত্রে দারুণ কার্যকরী।

কাজঃ
  • শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাকে সাহায্য করে।
  • হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কাজে লাগাতে সাহায্য করে।

উৎসঃ 

প্রাণিজ উৎসঃ
মাছের তেল, ফিস লিভার ওয়েল, মাখন, ডিমের কুসুম, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার

প্রাকৃতিক উৎসঃ
সূর্যের আলো

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ 
২.৫ মাইক্রোগ্রাম ( প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য )
১০ মাইক্রোগ্রাম ( গর্ভবতী, প্রসূতি ও শিশুর জন্য )

বিঃদ্রঃ সূর্যের আলো সরাসরি ভিটামিন ডি এর উৎস নয়। আমাদের ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরির উপাদান নিষ্ক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকে। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে এটি সক্রিয় হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল উদ্ভিজ্জ্য খাদ্য থেকে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় না।

ভিটামিন-ইঃ

কাজ ঃ
  • এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ভিটামিন-এ, ক্যারোটিন এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডকে জারিত হয়ে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে
  • প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ বন্ধ্যাত্ব নিবারণে সহায়তা করে
উৎসঃ

প্রাণিজ উৎসঃ
 কডলিভার ওয়েল

উদ্ভিজ্জ উৎসঃ 
বাদাম,গম, যব, সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল এবং পামতেল

মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণঃ
প্রায় ৫-১০ মিলিগ্রাম

সূত্রঃ জাতীয় ই-তথ্যকোষ

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.