ডায়াবেটিস কি ও কত প্রকার?



আমরা আমাদের দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। জটিল খাদ্য উপাদান ভেঙ্গে রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে এইসব খাদ্য উপাদান প্রবেশ করে। এই কাজটি সম্পন্ন করতে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা হল ইনসুলিন। আমাদের অগ্ন্যাশয় থেকে এই ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু যখন কোন কারণে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তখন এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা একেবারেই তৈরি করতে পারে না।

এই অবস্থায় সমস্ত খাদ্য উপাদান বিশেষত গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে থাকতে থাকতে একসময় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আমরা জানি শক্তি উৎপন্ন হতে হলে খাদ্য উপাদান কোষে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু এই অবস্থায় কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করেও পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি পাই না। আর এই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলে। অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে রোগ না বলে অবস্থা বলে থাকেন। কারণ এই অবস্থায় অন্যান্য রোগেরও সৃষ্টি হয়। সুস্থ অবস্থায় রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের মাত্রা খালিপেটে ৫.৬ মিলিমোল/লিটার বা খাবার খাওয়ার ২ পর ৭.৮ মিলিমোল/লিটারের কম থাকে। যদি খালিপেটে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.১ মিলিমোল/লিটার এর বেশি বা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমান ১১.১ মিলিমোল/লিটার এর বেশি হয় তবে ঐ ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদঃ

ডায়াবেটিস প্রধানত ৩ প্রকার

১.টাইপ ১ ডায়াবেটিস,
২.টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও
৩.জেসটেশনাল ডায়াবেটিস

১.টাইপ ১ ডায়াবেটিসঃ 
যখন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ ধ্বংসের কারণে অগ্ন্যাশয় কোন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না সেই অবস্থাকে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ধরা হয়। এই ডায়াবেটিস হলে খাদ্য গ্রহণের সাথে ইনসুলিন ইনজেকশনের সাথে নিতে হয়। এক কথায় বলা হয় ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস।

২. টাইপ ২ ডায়াবেটিসঃ
যখন অগ্ন্যাশয় অল্প মাত্রায় ইনসুলিন তৈরি করে এবং বাইরে থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না এবং সম্পূর্ণরূপে পরিমিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয় এই ডায়াবেটিসকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে। একে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট ডায়াবেটিসও বলা হয়। তার মানে এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

৩. জেসটেশনাল ডায়াবেটিসঃ
এই ডায়াবেটিসটি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা হয়ে থাকে। গর্ভকালীন সময়ে রক্তে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন প্রস্তুত না হলে এই অবস্থাকে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়।

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.