শিশুর ১০০০ দিনের পুষ্টির গুরুত্ব


যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রতিনিয়ত আসছে পরিবর্তন, সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় শৈশবকালে যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন বয়সকালে তা পরিবর্তন করা তুলনামূলকভাবে অনেক কঠিন। বিশেষত শিশুর প্রথম ১০০০ দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রথম ১০০০ দিন বলতে গর্ভাবস্থায় ২৭০ দিন এবং শিশুর প্রথম ৭৩০ দিন বা দু বছর সময়কালকে বোঝায়। এই ১০০০ দিনের সমাপ্তিকে শিশুর দ্বিতীয় জন্ম বলেও অভিহিত করা হয়। মূলত এই ১০০০ দিন সময়ে মা ও শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে শিশু সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অনেকটাই এগিয়ে যায়। আর যদি এই সময়ে যদি শিশুর অপুষ্টি দেখা দেয় তবে তা কোনভাবেই পরবর্তীতে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। 


এজন্য শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের সঠিক পুষ্টি এবং শিশু জন্মের পরে মা ও শিশু উভয়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। সন্তান জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু তা শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান মায়ের বুকের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে জন্মের সময় শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায় এর ফলে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি আবার শিশুকে প্রথম দুই বছরে ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার না দেওয়া সম্ভব হলে পরবর্তীতে সেই শিশুর খাটো হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সে কম উচ্চতার অধিকারী হয়। আর উচ্চতা কম হলে কোন ব্যক্তি অল্পতেই বেশি ওজনের অধিকারি হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গর্ভধারণের পর থেকে শিশুর জীবনের প্রথম ১০০০ দিবসে সঠিক পুষ্টি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে সেই শিশুর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা বেশি হয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে অন্যান্যদের তুলনায় বেশি কর্মক্ষম হয়। একজন সুস্থ সবল ব্যক্তি হওয়ায় তার আয় করার ক্ষমতা বেশি হয়, তাই পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে। বিশ্বজুড়ে অপুষ্টি হল শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ। দরিদ্রতা, অশিক্ষা ও কুসংস্কারের কারণে শিশুর অপুষ্টির হার কোন ভাবেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না। শিশুর এই সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত নির্ভর করে অনেকটাই তার মায়ের দায়িত্বশীলতার ওপর। তাই শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে গর্ভকালীন সময় থেকে মায়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করা জরুরি।

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.